Thursday, December 10, 2020

চাঁদের পাহাড়

একটা কালো কাঁচের বয়াম আর 
তাতে রয়েছে একমুঠো স্বপ্ন।
হাত পাত, দেখ
তোমার হাতে নেমে আসছে তারা, 
যেমন নক্ষত্রপথ বেয়ে নামে আলোকরেণু, কিংবা
কোন শীতকালের দুপুরে পিঠের মাঝে
পরশ রাখে সূর্যরশ্মির মিঠে নরম হাত।

এবার মুষ্ঠিবদ্ধ করে হাতভর্তি স্বপ্ন নিয়ে
চল যাই রিখটারসভেল্ডে
সঙ্গী থাক একটা তাঁবু আর একগোছা
পাকান সাহস।
না খুব পক্ক না,
একটু নরম, একটু দামাল
কিন্তু অনেকটা লড়াকু
যা দিয়ে উঠব একাধিক সম্ভাবনার পাহাড়।

কিংবা
চল দেশে ফিরে যাই।
এই কালান্তক সময়ে,
প্রান্তরের পর প্রান্তর,
পেরিয়ে মরু কান্তার,
দুর্গম গিরিপথ ঘুরে
চল, যাই।
'পেটে বড় ক্ষিদে বাপ! আর কত দূরে রে গাঁ?'

তবে শুধু জেন এ সেই স্টেশন নয়
যেখানে
চাবুক শরীর নিয়ে জেগে উঠেছিল মাম্বা।
এ আরো বিষাক্ত, বন্ধুর পথ
এ পথ স্বপ্ন-ছলনার।
আজ যদি শুই একটু আগুনের আঁচ নিয়ে
গল্পছলে,
অসীম আকাশপটতলে,
চোখে নেমে আসে তিমিরগাঢ় ঘুম,
তবে রাতগাড়ি তুলে নেবে আমাদের
অতর্কিতে।

সকালের বার্তা কয়ে দেবে
আমাদের ব্যর্থ অভিযানের ভঙ্গুর যাত্রাক্লিষ্ট কথা।

বিশ শব্দের গল্প #৬

একটা মুখ, ভয়ার্ত, গাড়ির তলায় তলিয়ে যাচ্ছে! প্রাণপণে ব্রেক চেপেও  ব্যর্থ সমীরণ। কুড়ি বছর হল, দুঃস্বপ্নটা একই আছে।

অবক্ষয়

কাঠামো ভেসে যায়, শরীরে লাগে জল
মূর্তি বদলায়, অসীমে মরুস্থল।
প্রাপ্য জীবনের শ্বাস যা বুঝে নেয়
বলিরেখাগুলি তবে বুঝি জীবনে সঞ্চয়।
হয়তো কোন কাক ফিরে বসে দাঁড়ে
মরকালে লাগে রোগ, যম কি 'রা' কাড়ে?
নিছক শব্দের জালে না পড়ে ধরা
বহতা মিছিলের ক্লেদ বা বিবমিষা।
অমানিশা যদি বা সফেন আগ্রাসী
চাঁদ তো গগনে নিছকই বনবাসী। 
স্তুতি তুমি দান কর কারে হে যাজ্ঞিক?
অবলা তবু সবে, তথাপি প্রান্তিক।
ব্যর্থ লিপিকার কাগজে আঁক কষে
নিভেছে দেউটি, জ্বলন শুধু বিষে।
-কোলাজে প্রকাশিত ২০২০

আলেয়া

চাঁদ ধরব বলে বেরিয়েছিলাম অমাবস্যা রাতে
চরকা বুড়ির গোলকধাঁধায় পা আটকাল
আদ্দেক 'লীন' হয়ে যাবার বাসনাতে
অপ্রাপ্তি, জীবন শুধুই এক মধুমেহ কোন্দল।

পরিবর্তন

ভণ্ডুল হওয়া চকমকি রং
খাদের কিনারে আলসে দাঁড়ায়ে নিকোনো উঠান।
মাদলে নাচে রাধা সাজে কানু, 
গলা মেলে ধরে খালাসির গান
পরিচিত ছায়া প্রেত হয়ে যায়
এও তবে মিছে? সকলই কী সঙ?

পলাতক

বড় পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।
সব ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে।
পালিয়ে যাব, একদিন
দেখে নিও।

সেদিন আমার ফোন নাম্বারটা ফেলে দিও।

শাড়ি

প্রার্থনা রং, তুলসী মঞ্চ
আর্তনাদের ভগ্ন অংশ
বরফি, বুটি, চিত্রকল্প
জামদানি বা তসরে গল্প।
বেনারসির আমজি গুমোর
হালকা বাতাস বাইরে গুমোট।
বাস এর ভিড়ে, নয়নঠারে
কুটিল দৃষ্টি দেখছে তারে
মুছিয়ে দিয়ে আঁখির পাতা
মাটির কাছেই অঞ্চলে কথা।

Tuesday, October 6, 2020

সুরের তরী

আখিরে তাঁরই সুরের তরী
'আসরা' হল, কুল মেলাল।
মোহিনী কণ্ঠ, এ কি লাবণ্য
শান্তি-ছাওয়া, আখতারি।
                

Friday, September 25, 2020

ছাড়া-ছাড়ি

ফুটে থাকে একলা সাদা,
নিভন্ত আঁচ শত রাত্রি জাগা,
হাত ছাড়ানো ঘুমের ঘোর
বন্ধু-হারা, নাড়ির টান
কে জানত এত পলকা এ ডোর।

Thursday, August 6, 2020

অক্ষমতা

তুলসীপত্র হাতে জন্মেছিলে কি কালো রাতে?
কোথা থেকে আনো এত বিশ্বাস?
আমার নৌকো ভেসে যায় খরস্রোতে,
আমার চাঁদ সর্বদা ছায়াময়।
আমার গল্পে লক্ষ্মীপেচকও ফেলে দীর্ঘশ্বাস।
যে সবল নখর তার অবহেলে জিনেছিল ক্ষুধা
সেও আজ পড়ে আছে ব্যর্থ, কবলিত হুতাশ।

এ কাব্য অক্ষম আজ তোমায় দিতে কোন স্বাদ
বর্জ্য যদি তবে বর্জ, পোড়াও, হানো বজ্রাঘাত।

       

Tuesday, July 28, 2020

হাঁটা

পায়ের তলার মাটিটা যেন কেমন
আশ্রয় দেয় না মোটে
তপ্ত কয়লা পায়ের তলে যেমন
ফোস্কা ভাগ্যে অমনি খালি জোটে।

বহূদূরের পথ যে আমার ভাই
গ্রামের নামটি আমার ভাসানপুর
কাজের দেশে কাজ তো আর নাই
ঘরের কুয়ো অভাব সমুদ্দুর।

শুনিয়েছিল হরেন কাকা আমায়
কারা না কি চাইত ভাতের ফ্যান।
আমার ছেলে উদাত্ত দাবি জানায়
হবেই না কি সে কমপ্ল্যান ম্যান।
                      

Monday, July 27, 2020

বাংলা

এ কোন আখর, এত লাল!
কে ঢেলেছিলে এত স্নেহ জোছনার মত?
সেদিন পেয়েছিল কি ধারাস্নান মাটির সে গাল?
কোন বর্ণের পরিচয়ে উদ্বেল ছিলে নিয়ে এত ক্ষত?

কণ্ঠ উজাড় করে আউড়েছ সহজ সে পাঠ
কোকিলও শুনেছিল ভুলে চেনা কলরব।
আরো ঢালো রঙিন সে বসন্ত, হে বিরাট
অর্ঘের স্মৃতিতে জাগুক ভালবাসা, ভাষার স্ব-রব।

Sunday, July 26, 2020

নটরাজ

মহাপ্লাবনের প্রতীক্ষারত
হে নটরাজ, নিদ্রামগ্ন,
বাজাও ডম্বরু
হোক না আজ শেষের শুরু।

Saturday, July 25, 2020

ঘনায়মান

ঘনঘোর ঘনঘটা গগনে জাগি উঠে,
দ্রিমি দ্রিমি তালে বাজে বাদল ডম্বরু;
চকিতে চমকি দামিনী আঁখি মেলে,
এ কোন উল্লাসে দামাল হল তরু!

নৃত্য পটিয়সী, অঙ্গে মূর্চ্ছনা
ধায় স্রোতস্বিনী সে, যুবতী ললনা।
স্বভাব চঞ্চল বাতাস সে উন্মাদ,
ছিন্ন করি ফিরে তপন-তপ্ত, রুক্ষ জটাজাল।

বর্ষা সমাগম দূর দিগন্তরে
এ কল্প কবি বুনে, নিমেষে মন্তরে।

(ভাবছিলাম জাভেদ আখতার সাহেবের 'ঘনন ঘনন' -এর প্রথম স্তবকটা কীভাবে অনুবাদ করা যায় কথার খেলাগুলো মাথায় রেখে। বাকিটা তারপর অবশ্যি আমার কল্পনা। হায়দারাবাদে এখন বৃষ্টি পড়ছে না। আনন্দ-বর্ষা শুধু মনে।)

বৃষ্টির ছাঁট

বৃষ্টিরা সব ঝাঁপিয়ে এল কালকে রাতে
জানলা-কপাট সপাট আঘাত গ্রিলকে করে।
তীব্র ছিল আলিঙ্গনের দাপট তখন,
নবাব-শহর পায়ের তলায় লেপ্টে রাখে
স্মৃতির মানিক, অলি-গলির গল্প অনেক
নাট্য-কাব্য; সিক্ত বাসে হূরের দলও গজল বোনে।

বর্ষাতুলি এমনি আঁকে রূপকথাদের
গাড়িরে চাকার তুফান ভেজায় শৈশবকে।
গাছের পাতার আঁজলা পানির ফিসফিসানি
'বইতে থাকুক ধারার শ্রাবণ অভিমানিন।  

Thursday, July 16, 2020

হতাশা

হঠাৎ করেই গান ধরেছে আজ হতাশা
তানপুরাতে সপ্তসুরের ধারাস্নান
জীর্ণ বাড়ির দরজা ঘেঁষে সবুজ বাসা
মনের  কোনে দিচ্ছে উঁকি হেলায় রাখা এক অভিমান।

মহীনের ঘোড়াগুলি

তারা জেনেছিল মানুষে মানুষে নক্ষত্র-দূরত্বের শাপ;
তারা বলেছিল ধাঁধাতুল্য প্রেমের সংলাপ।
তাদেরি গান আকাশ-খিড়কিতে দেয় উঁকি,
অন্তরে ছোটে আজো মহীনের অদম্য ঘোড়াগুলি।

নীলাম

নীলাম ঘরে দর উঠেছে, বিক্রি হবে গদি;
কে যেন এক বলেছিল 'গণ'রাই সব যন্ত্রী?
স্বপ্ন-নিদ্রা ভঙ্গ হলে রগড়ে চক্ষু দেখি,
ভাঙ্গা কেদারায় দাদু বসে, পুকুর গেছে চুরি।

বারিশ

পশলার বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে
এ শহর, নুয়ে গেছে
গাছ, মাটি, আর যত স্থিরতা।
বয়সের ভার স্নাত, চকমকে দৃঢ়তা।
আজ সব ধুয়ে সাফ
সব খুন আজ মাফ
মোর শহরকে ছাপিয়েছে ছলছল
স্নেহভরা বাদরা সে, স্নিগ্ধ, কী টলমল।
কোথা আছ বাহিরাও
মোর সাথে ভিজি লও
শহরের আঙ্গনে বাদরা, মন প্রাণ মতওয়ালা
তাল সুর মধুমাখা, উপচায় প্রকৃতির পিয়ালা।
আজ শ্যাম বাঁশি লয়, আজ নট নাচি যায়
পার্বতী, রাধিকা, সেই তাল শিখি লয়
বারিধারা সুর তোলে সব নদী তান ধরে
বর্ষার পারাবারে সকলে ভাসিতে চাহে
মোর শহরকে ভাসায়েছে ভরসা
মোর শহরের অঙ্গনে জুটিয়াছে, বরষা।

Sunday, May 3, 2020

বিশ শব্দের গল্প #৫

"তোর বাড়িতে আমাদের ব্যাপারটা বলতে পারবি তো?" রমেনের প্রশ্ন। ট্রেন ছাড়ে। কাঞ্চনের কানে মার গলা, "এ মেয়েকে তোর পছন্দ হব্বেই।"

বিশ শব্দের গল্প #৪

মালটার একঘন্টার পরিশ্রম সার্থক! জালটা বেশ টান টান হয়েছে। রোদের আলোয় সেটা চকমকিয়ে উঠছে মাঝে মাঝেই। অনীশের চটি ধেয়ে গেল।

বিশ শব্দের গল্প #৩

নিরালা রাস্তায় যেন মাটি ফুঁড়ে উঠে এল সাদা থানে জড়ানো মূর্তি। কঙ্কালসার হাতে বাটি। অভীককে বলল, 'বাবু, একটু ফ্যান দে।'

বিশ শব্দের গল্প #২

চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে ছলাৎ ছল করা গঙ্গার দিকে তাকাল সুমেধ। 'আমি আসছি জয়তী'। ঠিক সেই সময়েই, সূর্য ডুবল।

বিশ শব্দের গল্প #১

অন্ধকারটা বেশ ঘনিয়েছে। ভূতগুলো আসবে না তো? নাঃ, ভূত বলে কিছু নেই। পরেশ নিশ্চিন্তে আলসে থেকে নিজের বিছানায় নেমে এল।

Saturday, April 11, 2020

আগুন

সিগারেটে মৃদু, নিঃশব্দ টানের মতন
জ্বলে ওঠে আগুন
তামাক, বাড়ি, চিতা - একাকার কেমন!

আগুনের ভস্ম মেখে নব নট
ওমে ভরে নেয় বুক।
ঠোঁটে নিয়ে শলাকা শুধোয় আমায়,
"হবে না কি ভাই, একটু আগুন?"

ধর্মপথ

গলিত শবের মধ্যে দিয়ে মরুতীর্থের পথ,
পূত-গন্ধের মধ্যে নাকি স্বয়ম্ভূ ঈশ্বর।
বিশ্বাসেই তো মিলায় বস্তু, তর্ক করা বৃথা,
ধর্ম-ধ্বজির খড়্গে তাই শান্তি বচন লেখা।